May 2, 2014

নিজেকে নিয়ে কিছু কথা

স্বাগতম, আমি মুহাম্মদ সাদাত আল-জনি। নিজেকে সব সময় একজন স্বপ্নবাজ তরুণ হিসেবে পরিচয় দিতেই সবচেয়ে বেশি স্বাছন্দবোধ করি। একজন মুসলিম, মনে প্রাণে একজন খাঁটি বাঙ্গালী এবং সর্বশেষ নিজেকে একজন ক্ষুদে প্রযুক্তিবিদ হিসেবে পরিচয় দিতেই বেশি ভালোবাসি।

আমার জন্ম ১৯৮৪ সালের ১০ই মার্চ কিশোরগঞ্জ জেলার বাজিতপুর থানার গাজিরচর ইউনিয়নে নানার বাড়িয়ে কোন এক তপ্ত দুপুরে। আমরা ৩ ভাই বোন। আমি দ্বিতীয়। বড় ভাই বেশ কয়েক বছর ধরেই মিউজিক কম্পজিশনের সাথে যুক্ত। ছোট বোন বাংলাদেশের নামকরা একটি পাব্লিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত।

ছোট বেলা পুরোটাই কেটেছে বাজিতপুরেই। প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক ওখান থেকেই করা। পুরোদুস্তর গ্রাম্য দামাল ছেলের মতো শৈশবে বেড়ে উঠা। হৈ হুল্লোড়, খেলাধূলা, লাফঝাঁপ, দৌউরোদৌড়ি, পুকুর-খাল-বিলে সাঁতার, মাছ ধরে, ঘুড়ি উড়িয়ে আর প্রতিবেশীদের গাছের ফলমূল, ফুলের গাছ চুরি করেই কেটেছে গোটা শৈশব।

ছাত্র জীবনে কখনোই মেধাবী বলতে আক্ষরিক অর্থে যা বুঝায় তা কখনো ছিলাম না। বরাবরই ব্যাক বেঞ্চার ছিলাম। মনোযোগ দিয়ে ক্লাস করার চেয়ে দুষ্টুমিতেই বেশি বেস্ত কাটতো ক্লাস গুলো। এর খেসারতও দিতে হয়েছে অনেক। স্কুল লাইফে গরুর মতো মার হজম করতে হয়েছে। যদিও এ নিয়ে কোন আক্ষেপই নেই। মুখস্ত বিদ্যা কখনোই ভালো লাগতো না। প্রচুর কার্টুন পাগল ছিলাম। এই কার্টুনের জন্য অনেক স্কুল কামাই করে মার হজম করতে হয়েছে। সপ্তাহে ২-৩ দিন ক্লাস কামাই করা ছিল নিয়মিত ব্যাপার। ক্লাস কামাইয়ের কারণ হিসেবে প্রচুর মিথ্যে বলতাম। কারণ কার্টুনের জন্য বা পড়া মুখস্ত করা হয়নি এটাতো এর ক্লাস শিক্ষককে বলার মতো কোন যুক্তিসঙ্গত কারণ হতে পারে না। এক সময় ক্লাস শিক্ষক আমার ক্লাস কামাইয়ের কারণ বলার আগেই উনি নিজ থেকে বলতেন ও তুই নিশ্চয় অসুস্থ ছিলি না হয় নানি বাড়িতে বেড়াতে গেসিলি তাই না জনি! আসলে তথাকথিত মুখস্ত নির্ভর স্কুল লাইফটা মোটেই পছন্দ ছিল না। তবে পড়ার পার্টটুকু বাদ দিলে SSC পর্যন্ত স্কুল লাইফটাই ছিল আমার লাইফের বেষ্ট পার্ট।

সব সময়ই ইচ্ছে ছিল বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশুনা করবো। যদিও এর শুরুটা মোটেও ভালো ছিল না। জীবনে একবারই ফেল করেছি সেটাও সাধারণ বিজ্ঞনে। ক্লাস ফোরে দ্বিতীয় সময়িক পরীক্ষায় পেলাম ২৭। যেখানে পাস মার্ক ছিল ৩৩। যথারীতি কপালে জুটল রাম ধোলাই। শিক্ষকের যে ব্যাপারটা খুব খারাপ লাগতো তাহলো কোন প্রশ্ন করে সেটার উত্তর না পাওয়া। ফলশ্রুতিতে উল্টো ঝাড়ি খাওয়া। কে জানতো সেই বিজ্ঞানই আর কোন দিন আমার পিছু ছাড়বে না। সেই স্কুল লাইফ থেকে এখন পর্যন্ত বিজ্ঞান আর প্রযুক্তির সাথেই আছি। শুরুতে বিজ্ঞান পড়ার পেছনে মূল কারণ ছিল সম্ভবত মেধাবী সব ছাত্র মানেই বিজ্ঞান পড়ে। পাইলট হবার খুব ইচ্ছে ছিল। ফাইটার প্লেইনের। ইচ্ছেটা আজ পর্যন্ত বহাল আছে। জানি লাইফের এই পর্যায়ে এসে এই চাওয়াটা অমুলক কিন্তু এই ইচ্ছের উপর ভর করেইতো এখন পর্যন্ত পথ চলছি। শুরুতে গণিতে অনেক ভীতি ছিল। মুখস্ত করে পরীক্ষায় খাতায় গণিত লিখে দিয়ে আসতাম। a এর জায়গায় x দিয়ে অংক আসলেই পেঁচিয়ে যেতাম। পরে অবশ্য এই গণিত ভীতি দূর হয়ে গেল। এর পর আর কখনো পেছনে তাকাতে হয় নি।

কলেজ লাইফ কেটেছে গ্রামেই। কারণ রেজাল্ট আহামরি ভালো ছিল না। আর ঢাকা এসে নামীদামী কলেজে বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশুনা করার যোগ্যতা ছিল না। ভর্তি পরিক্ষা দিয়ে কোথাও উত্তিন্ন হতে পারি নি। বাধ্য হয়ে গ্রামেই ইন্টার করি। সেটা ছিল আমার লাইফের বেষ্ট ডিসিশন। সত্যি সত্যি কলেজ লাইফে আমি পড়াশুনার মাঝে আনন্দ খুজে পেলাম। আর এর পেছনে একটাই কারণ ছিল আর সেটা হল স্যার মেড্যাম তাদের প্রতিদিনের লেকচার দিয়ে যেতেন। কিন্তু পরদিন স্কুলের মতো করে সেই পড়া মুখস্ত করে যেতে বলতেন না। নিয়মিত বিরতিতে ক্লাস টেস্ট দিতে হতো। খুব আগ্রহ নিয়ে সব ক্লাস করতাম। আর সেটার ফলও পাওয়া গেল HSC এর রেজাল্টে। অনেক ভালো করলাম।
এবার শুরু হল রিয়েল ফাইট। সারা দেশের সকল মেধাবীদের সাথে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা। অভিজ্ঞতা মোটেও সুখের ছিল না। শুরুর দিকে কোথাও টিকতে পারছিলাম না। এর দিন দিন হতাশ হচ্ছিলাম। নিজের উপর নিজের কনফিডেন্স হারিয়ে ফেলতে বসেছিলাম। ফাইলানি দেশের মতামতি প্রথম সারির একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজ্ঞানের একটি বিষয়ে চান্স পেয়ে যাই। এর পর থেকে দিন দিন বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহ বেড়েছে কিন্তু এক ফোঁটাও কমে নি।

ক্যাম্পাস লাইফ পড়াশুনার চেয়ে বেশি হেসে-খেলে, বন্ধু-বড় এর ছোটদের সাথে আড্ডা দিয়েই বেশি কেটেছে। ক্যাম্পাসে কাটানো ৬টি বছর নিঃসন্দেহে লাইফের বেষ্ট সময় ছিল। এখনো খুব মিস করি দিন গুলো। সব সময়ই মিস করবো আশা করি। সময় পেলেই এখনো ছুটে যাই প্রিয় ক্যাম্পাসে।

আইটি তে হাতেখড়ি খুব বেশি দিনের না। প্ল্যান যদিও ছিল অনেক পুরনো। SSC এর পর একবার প্ল্যান করলাম সবাই গণহারে মাইক্রোসফট অফিস আরও ভালো করে বললে মাইক্রোসফট ওয়ার্ড এলাকায় কিছু লোকাল ট্রেনিং সেন্টারে শেখা শুরু করলো। আমিও সবারই দেখে শুরু করলাম কিন্তু ২ দিনের মাথায় আগ্রহ হারিয়ে ফেললাম ট্রেইনারের শেখানোর ধরণ দেখে। আর হল না। আমার আইটি চর্চার মুলতবি। স্নাতক ২য় বর্ষে রোমম্যাটকে বাসা থেকে ডেস্কটপ কিনে দিল একটা। ওটাই সারাদিন আমার NFS 2 আর Mortal Combat গেমস খেলা চলতে লাগলো। এবারও আইটি চর্চা হল না আমার। 

সত্যিকারে আইটি চর্চা শুরু হল মাস্টার্সের শেষ দিকে অনেকটা বাধ্য হয়ে। তখন থিসিসে কাজ করি। ফাইনাল সাবমিট করতে হবে হার্ডকপি ও সফটকপি। কাজ করতে হবে মাইক্রোসফট ওয়ার্ড, এক্সেল ও পাউয়ার পয়েন্টে। লাইফের প্রথম একটা সেকেন্ড হ্যান্ড ডেস্কটপ পেলাম বড় ভাইয়ের কাছ থেকে। সেলেরন প্রসেসর আর ৫১২ মেগা বাইট RAM. সেই থেকে আইটি পথচলা।

সময়টা খুব একটা বেশি না। এইতো বছর ৪ হবে। তার পর টেলিকমিউনিকেশন কিছু দিন হাতেখড়ি। তার পর শুরু হল আসল কোডিং। সরাসরি জাভা দিয়ে। এখনো জাভাতেই আছি। কর্মক্ষেত্র যতোটুকু ছিল সবই জাভা নিয়েই। জব করার সুযোগ হয়েছে সফটওয়্যার ফার্ম ও মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে। আপাতত কিছুতে নেই। ইচ্ছে নিজে নিজে কিছু করার। গদবাধা ৯টা-৬টা অফিস করো কালেই ভালো লাগতো না। 

স্বাধীনভাবে কিছু করে যেতে চাই। শুরুতে নিজে পরে সম্ভব হলে নিজের বানানো কোন টিম নিয়ে। দেশ ও দশের জন্য ভালো কিছু করে যেতে চাই। সবাইকে নিয়ে আগাতে চাই। চাওয়া গুলো বড় আমি জানি। কিন্তু চাওয়া তো চাওয়া ই। চাওয়া তে কোন লিমিট থাকতে নেই। চাওয়া থাকবে সীমাহীন আকাশের মতো। এমনটাই আমি সব সময় বিশ্বাস করি।

ভালো লাগে না মানুষের দ্বিমুখীনীতি, মানুষের অযথা সময় নষ্ট করে সমালোচনা করা, পরনিন্দা করা, গাছে মই দিয়ে তুলে তার পর মই কেড়ে নেয়া। ভালো লাগে না তাদের যাদের মুখে এক আর অন্ততে আরেক। ভালো লাগে না এই দেশের রাজনীতি ও রাজনীতিবিদদের।

ভালো লাগে অনেক অনেক ঘুরে বেড়াতে, বন্ধুদের বা পরিচিতদের সাথে আড্ডা দিতে, নতুন এলাকা ঘুরে দেখতে, ঘুমাতে, স্বপ্ন দেখতে, নিজে হাসতে এবং অন্যদের হাসাতে, ভালো লাগে খেলাধুলা করতে, ভালো লাগে সাইক্লিং করতে, ভালো লাগে জোনাকি আর জোছনা দেখতে আর ভালো লাগে বৃষ্টিতে ভিজতে, ভালো লাগে হাসিমুখি বন্ধুর চেয়ে স্পষ্টভাষী শত্রুকে, ভালো লাগে সত্য বলতে আর ভালো লাগে বন্ধুত্ব করতে, নতুন নতুন টেকনোলজির সাথে পরিচিত হতে।

ফ্রিলেন্সিং এ আসতে চাইবার পেছনে মূল কারণ হল অন দ্যা ফ্লাই কাজ করে যেতে চাই। ঘুরে ঘুরে কাজ করে যেতে চাই।

এই তো এতো টুকুই। আর সবার শেষে একটি বিখ্যাত উক্তি মনে পরে যাচ্ছে আর তা হলোঃ

"That's one small step for a man, one giant leap for mankind."